পাপ মুছলে রোগ মোছে
পাপ মুছলে রোগ মোছে
শফিক ও আজিজ সাহেব দুই বন্ধু, সেই ছোট বেলা থেকে। আজ তারা দু’জনই বিড়াট ব্যবসায়ী। কোটি টাকার নিচে হিসেব নেই তাদের। দু’জনই তাদের সন্তানদের নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছেন। তাদের অফিস পাসাপাসি। কাজ শেষে একজন অন্যজনের অফিসে গিয়ে আড্ডা দেয় প্রায় প্রতিদিন।তাড়া অতবড় বিসনেস ম্যান হলে কি হবে, তাদের কোন ব্যাবসাই সৎ পথের নয়। শফিক অবৈধ ব্যবসা আর আজিজ সাহেব লোক ঠকানোর ব্যবসা করে। হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে লক্ষলক্ষ টাকা নিয়ে টাকা মেরে আজ তারা সমাজের প্রথম শ্রেনীর মানুষ।
কাজ শেষে শফিক আজিজ অফিসে গিয়ে বলল- কিরে দোস্ত আমার অফিসে কয়েকদিন হল যাস নি ঘটনা কি ? শরীর খারাপ করে নি তো?
আজিজ সাহেব- ঠিকি বলেছিস শরীরটা কয়েক দিন যাবত ভাল যাচ্ছে না।
শফিক সাহেব- ডাক্তার দেখা ।
- কাল দেখাবো ভাবছি।
-কাল কেন আজই দেখা।
-আজ একটু ব্যস্ত আছিরে। আজ হবে না।
পরের দিন সফিক আজিজ সাহেবের অফিসে গিয়ে দেখে আজিজ সাহেব মন মরা হয়ে বসে আছে।
শফিক সাহেব- কিরে ডাক্তার দেখিয়েছিস ?
আজিজ সাহেব- হ্যা দেখিয়েছি।
- কি বলল ডাক্তার ?
- ডাক্তার যা বলল শুনে আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে।
শফিক একটু অবাক হয়ে- কেন ! কি হয়েছে ?
- ব্রেন ক্যান্সার।
- বলিস কি এ কি করে সম্ভব !
আজিজ সাহেব- তিন মাসের বেশী বাঁচবো না দোস্ত। বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন আজিজ সাহেব।
তিন মাস সময়, ভাবতেই চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। এক একটা দিন আজিজ সাহেবের বিড়াট মূল্যবান। সময় যাওয়ার টেনশনে আজিজ সাহেব কাতর। শরীরটা কেমন যেন কাবু হয়ে গেছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
নামাজ পড়বো ? নাহ্ সারা জীবন পশ্চিম দিক হইনি এই তিন মাস পড়ে কি হবে। ভাবতে ভাবতে রাত ৩ টা। চোখে কোন ঘুম নেই। মৃত্যুর ডেট জানা থাকলে কেমন লাগে নিজে নিজে একটু ভাবলেই অনুভব করা যায়। মরেই যখন যাবো তাহলে একটা ভাল কাজ করে যাই, যার যার কাছ থেকে যত টাকা মেরে খেয়েছি তাদের সব টাকা ফিরিয়ে দিবো।
পরের দিন থেকেই নেমে পরেন আজিজ সাহেব, সবার সমস্ত টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং ফিরিয়ে দেওয়ার সময় ক্ষমা চেয়ে আসেন। কেউ ক্ষমা করে দেয়, কেউ অপমান করে, আবার কেউ কেউ রাগে গায়ে পর্যন্ত হাত তোলে। আজিজ সাহেব সব কিছু সহ্য করে তাদের সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে আসেন।
শফিক সাহেব এ খবর শুনে বলে- কি যে উল্টা পাল্টা কাজ করছিস বুঝি না। মৃত্যুর কথা শুনে পাগল হয়ে গেছিস, যে কয়দিন বেঁচে থাকবি আনন্দ ফুর্তী করে যা, মরার পরেতো আর আনন্দ ফুর্তী করতে পারবি না।
আজিজ সাহেব কোন কথা কানে নিলেন না। তার কাজ চালিয়ে গেলেন। সবার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে আসতে আসতে ২ মাস ২০ দিন শেষ। আর মাত্র ১০ দিন বাঁকি, কি আর করার মানুষ তো মরবেই একদিন। কেউ ২ দিন আগে আর কেউ ২ দিন পরে, এটাই সত্য । মনে একটু শান্তি পাচ্ছি সবার টাকা সবাইকে সঠিক ভাবে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি বলে।
৩ মাস শেষ, আর মাত্র ১ থেকে ২ দিন বাঁচবেন আজিজ সাহেব। শরীরের কি অবস্থা ডাক্তারকে শেষ বারের মতো দেখালেন। সব কিছু পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পর রিপোর্ট নিয়ে সোজা শফিক সাহেবের অফিসে গেলেন, গিয়ে দেখেন শফিক সাহেব মুভিং চেয়ারে উল্টো দিক হয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছেন।
আজিজ সাহেব খুশিতে- দোস্ত আজ আবার ডাক্তার দিয়ে সব চেকআপ করিয়েছি। দেখানোর পরপরই তোর কাছে সোজা এলাম। দোস্ত আমার ব্রেন ক্যান্সার ভাল হয়ে গেছে। আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। কি যে আনন্দ লাগছে তোকে বুঝাতে পারবো না। কি বেপার কথা বলছিস না কেন ? আমার দিকে ফিরে তাকা একবার দেখ আমি সুস্থ হয়ে গেছি , আমার সুস্থ হবার কথা শুনে কি তুই খুশি হস নি ? এই বলে আজিজ সাহেব উঠে শফিক সাহেবের কাছে গিয়ে গায়ে ধাক্কা দেয়।ধাক্কা দিলে চেয়ার থেকে শফিক সাহেবের হাত নিচের দিকে ঝুলে যায়। আজিজ সাহেব শফিক সাহেবের বুকে কান লাগিয়ে শোনেন যে তার হার্ড বিট হচ্ছে না।
আসলে মারা যাবার কথা ছিল কার, আর মারা গেল কে। আমরা পাপ থেকে দূরে থাকলে রোগ ব্যধিও কম হয়।
এই ছোট্ট গল্পটি যদি আপনার ভাল লেগে থাকে বা মনে একটু দাগ কেটে থাকে তাহলে সবার অবগতির জন্য শেয়ার করতে ভুলবেন না প্লিজ। যে কোন অভিমত, বা সমালোচনা করার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই। ধন্যবাদ সবাইকে ।
রচনা– এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
কোন মন্তব্য নেই