মোবাইল! ধ্বংস করতে পারে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক
মোবাইল! ধ্বংস করতে পারে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক
মধ্যবিত্ত
জীবনের অর্থ টানাটানির দেয়াল কখনোই বোধয়
ভাঙ্গা যায় না। অথচ এই দেয়াল ভাঙ্গার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি আমি। ভাগ্য রেখা সদয়ও
হয় না, আমার দিন বদলও হয় না।চাকরিটা কষ্টের, কিন্তু বেতন কম। এটাই নিয়ম, যেখানে পরিশ্রম
বেশি সেখানে অর্থ কম, আবার যেখানে পরিশ্রম কম সেখানে অর্থ বেশী। কলমের খোঁচা
দিয়ে কেউ পায় লক্ষ টাকা আমার কেউ ৩০ মিনিট রিক্সা টেনে পায় ২০ টাকা। সব মাথার বেপার।
আমার মাথাটাও হয়তো মধ্যবিত্ত, তাই হয়তো
আর উপরে যাওয়া সম্ভব নয়।
সারাদিন হেটে হেটে চাকরি করে বৃদ্ধ গাছের ন্যায়
নুইয়ে পরা শরীরটা নিয়ে যখন বাসায় ফিরে আমার বউটার শ্রাবস্ত্রীর কারুকারয করা মুখখানা
দেখি তখন মনটা আমার পরিচরযা করা সতেজ সবুজ যুবক গাছের মত ঝরঝরে হয়ে যায়।
কোন আবদার নেই তার। কারণ সে জানে এমন চাকরির স্বল্প
আয়ে এদিক ওদিক হিসেব মেলাতে গিয়ে অতিরিক্তের ব্যাংকে আর কিছুই ঢুকানো যায় না।
সে দিন সে হঠাৎ আবদার করে বসলো একটা মোবাইলের।বলল-এবার
ঈদে কিচ্ছু চাই না, তোমার বোনাসের টাকা দিয়ে একটা ফোন কিনে দিবে।
একটু
অবাক হয়ে বললাম- কেন! আমারতো একটা আছেই, এটা দিয়েইতো তুমি তোমার বাবা, মা সবার সাথে
কথা বলতে পারো। স্ত্রী একটু আল্লাদির সুরে দুই হাতে আমার শাটের দুই কলার ধরে বুকটা
আমার বুকের সঙ্গে লাগিয়ে বলল- তোমার সাথে তো কথা বলতে পারি না।
বউয়ের এতো সুন্দর ভালবাসার প্রকাশ এবং আবদারের
ভঙ্গি দেখে কোন স্বামীই বা না বলতে পারে। তাই আমিও পারলাম না। ঈদ বোনাস পেয়েই নিয়ে
আসলাম একটা মোবাইল ফোন। মোবাইল পেয়ে বউ আমার খুশিতে গদগদ। সেই রাতে একটু বেশীই আদর
পেয়েছিলাম তার কাছ থেকে। যেমনটা পেয়েছিলাম ঈদ বোনাস।
প্রতিদিন কথা হয় প্রায় সব সময়। অনেকটা অপ্রয়োজনীয়
গল্প। এতে চাকরিটা আমর সহজ লাগে। খুব একটা কষ্ট মনে হয় না। মনে হয় বউ আমার পাশেই আছে।
এভাবে চলে ৩/৪ মাস। আস্তে আস্তে ফোন করা কমে যায়।
আমি ঠিক এ বেপারে গভীর চিন্তা করি নি। হঠাৎ মনের মধ্যে প্রশ্ন, কি ব্যাপার! আমার অফিস
টাইমে ১০ থেকে ১২ বার কল দিতো এখন আর দেয় না কেন। একটু ভেবে মনটা স্বাভাবিক করে নিলাম।
হয়তো টিভিতে সিরিয়াল দেখছে।
পরের দিন একবারো কল করলো না। আমিই ফোন দিলাম দেখিতো
কি করছে আমার আদরের বউটা। কল দিতেই রাগে সমস্ত রক্ত আমার মাথায় উঠে টগবগ করতে লাগলো।
ফোন বিজি। ৫ মিনিট পর পর প্রায় এক ঘন্টা ট্রাই করলাম, বিজি! মনটা একটু খারাপ। খারাপ
হওয়াটায় স্বাভাবিক। কারণ সংসারে সন্দেহ জিনিসটা ভয়ানক ব্যাধি। বাড়িতে এসে বউকে জিজ্ঞেস
করতেই সাপের মত ফোস করে উঠে একটু উচ্চস্বরে বলল-বাবার সাথে কথা বলছিলাম। বলেই রান্না
ঘরে চলে গেল।
পরের দিন অফিস টাইমে আমার শ্বশুরের কাছে ফোন করে
বললাম- বাবা কেমন আছেন?
-এইতো
ভাল, তুমি কেমন আছো জামাই বাবা?
-ভালো,
শধু মেয়ের সাথে কথা বললেই হবে, জামাই এর খবর নিতে হবে না?
- কেন
বাবা এক সপ্তাহ হলো আমার মেয়ের সাথে কথা হয় নি।
কথা
শুনে বিদ্যুৎ গতিতে আমার মাথার চুলগুলো সজারুর মত খাড়া হয়ে উঠলো। বাবাকে বুঝতে না দিয়ে
বললাম- আমার সাথেতো তাও হয়নি। এসব বলে রেখে দিলোম। বাসায় গিয়ে একটু রাগ করে বউকে বললাম-
কালকে তোমার বাবার সাথেতো কথা বলো নি ! একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এবার গোখরা সাপের মতো
ফোঁস করে উঠে বলল-
ছিঃ তোমার মন এতো ছোট আমাকে নিয়ে আজে বাজে চিন্তা করছো। এই বলে কাঁদতে
লাগলো। কাঁদাটা হচ্ছে মেয়েদের সবচেয়ে সহজ ও ধারালো অস্ত্র। তার কথায় আমি পরে গেলাম
বিপদে। রাগ আর কি করবো, ক্ষমা চাওয়ার উপক্রম। এ ব্যাপারে আর কোন কথা বললাম না।
এর ফাঁকে হচ্ছে অনেক কিছু। আমার অগোচরে ছেলেটি
আসে আমার স্ত্রীর কাছে। আমার বউয়ের নৈস্বরগিক মধু পান করার জন্য। এরকম চলতে থাকে নিয়মিত।
হঠাৎ একদিন আমি অফিস থেকে রাস্তায় বের হতেই আমার চক্ষুতো চড়ক গাছ! আমার স্ত্রী একটা
ছেলের সাথে রিক্সায়। দেরি না করে পিছু নিলাম। দেখি তারা পার্কে ঢুকে দুজন খুব অন্তরঙ্গ হয়ে বসে গল্প করছে। আমার
সঙ্গে এতো অন্তরঙ্গ হয়ে বসেছিল কিনা আমার মনে নেই। দেখে আমার শরীরটা রি রি করে উঠলো।
পার্ক থেকে বের হয়ে কোন রাস্তায় কোন দিক যাবো ভেবে পাচ্ছি না। মাথা কোন কাজ করছে না।
মনে নেই কোন দিক যাচ্ছি, শুধু হাটছি আর হাটছি। আর চোখের সামনে সব ঝপসা, শুধু দেখতে
পাচ্ছি তাদের অন্তরঙ্গ বসে থাকা। কখন যে রাস্তার মাঝ পথে চলে এসেছি বলতে পারবো না।
একটা কার গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল।……………………………!
আজ আমি পঙ্গু! চাকরিটাও নেই। সুন্দর মসৃণ বউ আমার
এখন সেই ছেলেটির ঘরে।
(তাই বলছি মোবাইল নিয়ে
খুব সাবধানে থাকবেন। দুজনের মধ্যে বিশ্বাস রাখবেন। এখনকার ডিজিটাল যুগে সংসারে অশান্তি
নেমে আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে মোবাইল ফোন। দুজন দুজনের ফেসবুক পাসওয়ার্ড সেয়ার করবেন।)
এই
গল্পটি নিয়ে কোন অভিমত, বা সমালোচনা করার থাকলে কমেন্ট করে জানান আর ভাল লাগলে লাইকে
ক্লি করতে ভুলবে না। ধন্যবাদ সবাইকে ।
রচনা- এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
কোন মন্তব্য নেই