Header Ads

লাভ (উপন্যাস) পর্ব- ১


লাভ
                        এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন



উপন্যাস পর্ব- ১


প্রথম প্রকাশ ঃ- ১৬ই ডিসেম্বর ২০০০ইং 

প্রকাশক - মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ 
সুলতানগঞ্জপাড়া, বগুড়া। 
ফোন- ০৫১- ৩০২৮ 

প্রচ্ছদ :- সুচনা সিস্টেম কম্পিউটারর্স এন্ড প্রিন্টার্স 
দক্ষিণ কাটনারপাড়া, বগুড়া। 

মুদ্রণ ঃ- চয়েস প্রিন্টিং প্রেস, বগুড়া। 

কম্পােজ ও মেকআপঃ- শতাব্দী কম্পিউটার্স, 
সােলায়মান মার্কেট, (দ্বিতীয় তলা), 
চাদনী বাজার, বগুড়া। 

স্বত্ত্ব - সর্বস্বত্ব লেখকের। 

মুল্য ঃ- ৫৮.০০ টাকা মাত্র। 

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ - কাফি বিল্লাহ, মােস্তাকিম বিল্লাহ, সামছুল ইসলাম, মশিউর রহমান ও রেজাউল করিম।


 উৎসর্গ
  
আমার লিখা 
প্রথম উপন্যাস ‘লাভ’ 
আমার শ্রদ্ধেয় বাবা-মার 
করকমলে 
উৎসর্গ করলাম।

                                 -- লেখক


 
যা বলতে চাই
 
 ‘লাভ’ আমার প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটি 
প্রকাশে আমার বাবা আমাকে সর্বদিকে 
সাহায্য করেছেন। উপন্যাসের কাহিনী 
আমার কাল্পনিক । যদি কারাে জীবনের 
ঘটনার সাথে মিলে যায়-আমাকে ক্ষমা 
করবেন। পাঠক-পাঠিকার কাছে অনুরােধ 
 আমর জন্য দোয়া করবেন যেন আমি 
আমার লিখার হাত প্রশস্ত করতে পারি। 
উপন্যাসটি পাঠক-পাঠিকাদের সামান্য 
আনন্দ দিতে পারলে লেখক হিসেবে
 নিজেকে সার্থক মনে করব । এখন অনলাইনে 
‘কবিতাকণ্ঠ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা 
করছি  এবং ইউটিউব ও ফেসবুকে Channel M 
নামে চ্যানেলে আমার রচনা ও পরিচালনায় 
প্রতি সপ্তাহে নাটক ও শর্টফিল্ম রিলিজ হচ্ছে। 
দেখার আমন্ত্রণ রইল। ধন্যবাদ
                                                                               - লেখক।


১ 

          পালিকান্দা নামে এক ছােট্ট গ্রাম। গ্রামে ঢুকতেই প্রথম বাড়ির পর একটি সুন্দর বাড়ি। বাড়িটি তেমন বড় নয় । তিন ঘর বিশিষ্ট মাটির দেয়াল ও টিনের ছাউনি দেওয়া । বাড়িটি দেখে মনে হয় অনেক আগের। টিন কোথাও কোথাও জং ধরে লালচে হয়ে গেছে। তবে বােঝা যায় তারা সৌন্দর্য খুব পছন্দ করে। বাড়ির সামনে ছােট এক উঠান । উঠানের পাশ দিয়ে সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ লাগানাে। পরিষ্কার উঠানের বাম পাশে একটি টিউবয়েল তার পাশে একটি পাকা পায়খানা । 
 
বাড়ির সদস্য কম । মাত্র চারজন, বাবা, দুই ভাই-বােন। ভাই হৃদয় বােন জুসি । হৃদয়ের বয়স কেবল মাত্র সাত ও জুসির পাঁচ বছর। হৃদয়ের বাবা খুব গরীব, গ্রামের পাশেই হাট। হাট সপ্তাহে দুদিন বসে । হৃদয়ের বাবা হাটে চালের ব্যবসা করে। চাল বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। 
 
আজ রাতে হৃদয়ের বাবার চোখে ঘুম আসছে না। তিনি শুয়ে শুয়ে ভাবছেন। হৃদয়ের বয়স সাতে পড়ল । তাকে স্কুলে পাঠানো দরকার, তবে কি করে পড়াই, আমাদের লেখাপড়ানাের মত টাকা পয়সাও নেই। তাই বলে হৃদয়কে অশিক্ষিত রাখা যাবে না। কালই তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিব । এ কথা ভাবতে ভাৰতে, হৃদয়ের মাকে বলল- 
 
-হৃদয়ের মা? 
 
-হৃদয়ের মা বললাে, কি বল । 
 
-হৃদয়ের বাবা শুয়ে মাথায় হাত রেখে বললাে, কাল হৃদয়কে স্কুলে পাঠাবাে 
 
-হৃদয়ের মা বললো আমাদের আয় কম কিভাবে হৃদয়কে লেখা পড়া করাবে? 
 
-হৃদয়ের বাবা বলল, ও নিয়ে তুমি চিন্তা করাে না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছে । হৃদয়ই আমাদের ভবিষ্যৎ, তাকে লেখা পড়া শিখে অনেক বড় হতে হবে। 
 
- হৃদয়ের মা একটু মন শুকিয়ে বললাে, তুমি যা ভাল মনে কর তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। 
 
হৃদয় একটু দুষ্ট, খুব চঞ্চল কোন অলসতা নেই তার। বাবা মা যা বলে সে তাই শােনে। 
 
পরদিন সকাল ৯টা বাজে, তারা সব সময়ে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করে। আজ তারা এক সঙ্গে নাস্তা করছে।

-হৃদয়ের বাবা একটু আনন্দস্বরে বললাে, আজ হৃদয়কে নিয়ে এক জায়গায় যাব।
 
-হৃদয় বললাে, কোথায় বাবা । 
 
-হৃদয়ের বাবা বললাে, খাওয়া শেষ কর তাহলেই দেখতে পাবে কোথায় নিয়ে যাব। 
 
তারা সবাই খাওয়া শেষ করে হৃদয়ের মা হৃদয়কে নতুন সার্ট, প্যান্ট পরে দিল
 
হৃদয়ের বাবা খুব আনন্দে হৃদয়কে স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছে। বাবাকে আনন্দিত দেখে- হৃদয় বললাে, বাবা আজ তুমি এত হাসছাে কেন? 
 
-বাবা বললাে, তােমাকে আজ স্কুলে ভর্তি করাবাে, তুমি অনেক বড় হবে, তুমি বড় চাকরী করবে।
 
 হৃদয়ের মাথার বেন খুব ভাল। 
 
হৃদয় এখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। সে প্রথম স্থান অধিকার করে বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তিও পেয়েছে। বৃত্তির টাকা দিয়ে সে লেখা পড়ার খরচ চালায়। হৃদয় ক্রিকেট খেলা খুব পছন্দ করে। সে ক্রিকেট খুব ভাল খেলে। মাঝে মাঝে পাশের গ্রামের ছেলেরা তাকে খেলতে নিয়ে যায় । হৃদয় এস,এস,সি পরীক্ষায় ফাষ্ট ডিভিশন এবং তিন বিষয়ে লেটার পেয়েছে। 
 
ধিরে ধিরে তার নাম দু'চার গ্রামে ছড়িয়ে পরতে লাগল, কারণ সে ভাল ছাত্র, আর সে ভাল ক্রিকেটও খেলতে পারে। 
 
আজ রাতে তারা এক সঙ্গে খাওয়ার সময় হৃদয় তার বাবাকে বললাে। 
 
বাবা! 
 
-বাবা বললাে, 
 
-কি বল? 
 
-হৃদয় বললাে- আমি ইন্টারমিডিয়েটে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হব। 
 
-বাবা বললাে, ঠিক আছে, আমরা চাই তুমি লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে। 
 
এ কথা বলে বাবার মুখ শুকিয়ে গেল। চিন্তা করতে করতে ভাত ছেড়ে হাত ধুয়ে ঘরে গিয়ে খাটের এক কোণে বসল । তিনি চিন্তা করছেন ছেলেকে পড়াব, এত টাকা পাব কোথায়? ভাবতে ভাবতে মনে হল টাকার চিন্তা করে। কোন লাভ নেই হৃদয়কে পড়াতেই হবে। যত কষ্ট করা প্রয়ােজন করবাে তবুও তার নামে টাকা পাঠাবাে। এ কথা হৃদয়কে বুঝতে দিল না। 
 
পরদিন সকালে হৃদয় বগুড়ার উদ্দেশ্যে বের হবে ঠিক করল। হৃদয় অবসর সময় উপন্যাস বই পড়তে খুব ভালবাসে। কাল, হৃদয় বাবা মাকে ছেড়ে চলে যাবে বলে আজ রাতে তার ঘুম আসছে না, শুয়ে শুয়ে উপন্যাস পড়ছে। রাত ১২টা কখন বেজেছে সে নিজেই জানে না। জুসি হৃদয়কে খুব ভালবাসে তাই তারও ভাল লাগছে না। জুসি জানেই যে হৃদয় ভাইয়া এখনও ঘুমায়নি, কারণ দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে হৃদয়ের ঘরে আলাে জ্বলছে। হৃদয় দরজায় খিল লাগায়নি। জুসি আস্তে করে দরজা খুলে দেখে ভাইয়া খুব মনােযােগ দিয়ে উপন্যাস পড়ছে। জুসি হৃদয়ের মাথার ধারে গিয়ে বসলাে কিন্তু হৃদয় বলতেই পারে না। যখন জুসি হৃদয়ের মাথায় হাত দিলাে তখনই হৃদয় লাফ দিয়ে বসে পড়ল। 
 
সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় বললাে -জুসি তুই এখানে কখন আসলি 
 
-জুসি বললাে ঠিক ৫ মিনিট আগে।
 
- জুসি একটু মন খারাপ করে নরম স্বরে বললাে- ভাইয়া তুমি কালকে চলে যাবে বলে আমাকে খুব খারাপ লাগছে। 
 
-হৃদয় একটু হাসতে হাসতে বললাে, মন খারাপ করার কি আছে। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, শিক্ষার জন্য সুদুর চীন দেশে যেতে হলেও যাবে । মন খারাপ করিস না চৌদ্দ দিন পর পর এসে তােদেরকে দেখে যাব । 
 
-জুসি শুনে বললাে, তোমার সাথে লুডু খেলা হত, কেরাম বাের্ড খেলা হত, আরাে কত আনন্দ হত। আর হবে না তুমি চলে গেলে। 
 
-হৃদয় জুসির কথা শুনে হাসতে হাসতে বললাে, পাগলী মেয়ে। আর ওসব খেলার সময় আছে কি? তুই কতবড় হয়ে গেছিস। কদিন পরে তাে স্বামীর ঘরে যেতে হবে। 
 
-তখনই জুসি বললাে, আমি তােমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাব না। একথা বলে জুসি হৃদয়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল । 
 
-হৃদয় জুসিকে বুক থেকে মাথা তুলে চোখের পানি ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছিয়ে বললাে, কাদিসনে বােন তুই কাঁদলে আমার মন আরাে খারাপ হয়ে যায়। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ের চোখেও পানি এলাে। 
 
-কিছুক্ষণ পরে হৃদয় জুসিকে বললাে অনেক রাত হয়েছে যা ঘুমিয়ে পড়। জুসি কোন কথা না বলে তার ঘরে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল। 
 
পরদিন সকালে হৃদয় উঠতেই পারেনি। প্রতিদিন ফজরের সময় উঠে নামাজ পড়ত আজ উঠতে পারেনি। জুসি খুব ভােরে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে ভাইয়ার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে। হৃদয় চা কাপের শব্দ শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে উঠে বললাে, কি ব্যাপার তুই কোনদিন চা বানাসনি আজ কি মনে করে?
 
 -জুসি বললাে, তুমি আজ চলে যাবে তাই, একথা বলে হৃদয়ের পাশে বসে বললাে প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে চিঠি দিবে, না দিলে বুঝবাে তুমি শহরে থেকে আমাদের কথা ভুলে গেছ। 
 
-হৃদয় বললাে, অবশ্যই পাঠাবাে। তবে উত্তর যেন পাই। 
 
-জুসি বললাে, তােমার চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি উত্তর লিখে পাঠাবাে। এই বলে জুসি চলে গেল। 

সকাল ৯টা বাজে সবাই এক সঙ্গে খেতে বসেছে-খেতে খেতে হৃদয়ের বাবা হৃদয়কে লক্ষ করে বললাে, শহরে গিয়ে কোন অপচয় খরচ করবে না । আজে বাজে বখাটে ছেলেদের সাথে ঘােরা ফিরা করবে না। নিয়মিত গােসল, খাওয়া-দাওয়া করবে। শরীরের প্রতি যত্ন নিবে 
 
-হৃদয় খেতে খেতে মাথা নিচু করে বললাে, তােমার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করব বাবা। 
 
খাওয়া শেষে হৃদয় একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। হৃদয়ের মা হৃদয়ের ব্যাগে যা যা প্রয়ােজন গুছিয়ে দিয়ে হৃদয়ের ঘরে যেতেই হৃদয় ধপ করে পা মাটিতে ঝুলিয়ে ঘাটের উপর বসে পড়ল। 
 
-মা এসে বললাে, বগুড়া গিয়ে কোন মেয়েদের পাল্লায় পড়বি না। আমাকে কথা দে? 
 
-হৃদয় একটু কাঁদো সরে বললাে, ঠিক আছে মা, আমি তােমাকে কথা দিলাম কোন দিন কোন মেয়ের পাল্লায় পড়বাে না। 
 
হৃদয় বগুড়া যাওয়ার জন্য রেডী হলাে। হৃদয়ের বাবা হৃদয়কে বগুড়ার বাসে তুলে দেওয়ার জন্য পাঞ্জাবী পরে হৃদয়ের ব্যাগ নিয়ে বের হতেই- হৃদয় বললাে বাবা তােমাকে কষ্ট করতে হবে না, আমি নিয়ে যেতে পারবাে। এই বলে হৃদয় তার বাবার হাত থেকে ব্যাগটি জোর করে নিলাে । হৃদয়ের মা সকাল থেকে কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো লাল করেছে, জুসিও কাঁদছে- হৃদয় তাদের কান্না দেখে বললাে, তােমরা এভাবে কাঁদলে আমি কিভাবে যাব মা? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ের চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়তে লাগলাে। -হৃদয়ের মা কাঁদতে কাঁদতে হৃদয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাে, যা বাবা আর দেরি করিসনে। হৃদয় বের হল। পিছনে পিছনে হৃদয়ের বাবা, জুসি হৃদয়কে বাসে তুলে দেওয়ার জন্য আসল। 
 
রাস্তায় এসে দেখে বগুড়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য বাস দাঁড়িয়ে আছে, আর মাত্র ১০ মিনিট পরে বাসটি যাত্রা শুরু করবে। 
 
হৃদয়ের মা হৃদয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললাে, যা বাবা আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন তােক সুস্থ শরীরে রাখে। 
 
জুসিকে কাঁদতে দেখে হৃদয় বললাে, কাদিসনে। যাওয়ার সময় কাঁদতে নেই। এই বলে হৃদয় বাসে উঠল। হৃদয় বাসের বাম পাশের ছিটে বসে জানালা দিয়ে বাবাকে বললাে, বাবা তুমি আমার জন্য দোয়া করাে। 
 
বাবা বললাে, ফি আমানিল্লাহ। 
 
বাসটি বগুড়ার উদ্দেশ্যে আস্তে আস্তে যেতে লাগলাে । হৃদয় পিছনে তাকিয়ে বাবা, মাকে হাত নেড়ে শেষ বিদায় জানালাে। তারাও বিদায় জানালাে। এক সময় বাসটি চোখের আড়াল হয়ে গেল।

চলবে-------------

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.