অযোগ্য মা
অযোগ্য মা
আমি কখনো মাকে দেখি নি। হয়তো দেখেছি, মনে করতে পারছি না। বাবাই আমার সব। বাবার ভালবাসা, আদর আমাকে ২৫টি বছর মায়ের অভাব ভুলিয়ে রেখেছে। মা কোথায় আছে কেমন আছে এ ব্যপারে আমি আমার বাবার কাছ থেকে কখনো শুনতে চাই নি। বাবাও বিয়ে করেন নি আমার দিকে চেয়ে। আজ মা দিবস। ভীষণ মনে পরছে মাকে, মা সম্পর্কে খুব জানতে ইচ্ছে করছে। কেন আমার বাবাকে ছেড়ে চলে গেল ?
সকাল বেলা বাবাকে বললাম- চলো পার্কে থেকে ঘুরে আসি। হাঁটাও হবে হাওয়াও খাওয়া হবে।
বাবা- হঠাৎ আজ কি মনে করে ?
আমি- চলনা হাটতে হাটতে কথা বলবো।
ফুরফুরে বাতাস বুকটা জুড়িয়ে যাচ্ছে। আমি মাথা নিচু করে আছি। বাবাও কথা বলছে না। বাবার চোখে মুখে কেন যেন কষ্টের ছাপ, হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কি জিজ্ঞেস করবো। তবুও মনের কষ্টকে ধরে রাখতে পারলাম না বলেই ফেললাম- বাবা আজ তোমাকে যা যা জিজ্ঞেস করবো তার সঠিক উত্তর দিবে তো ?
বাবা- কি ব্যপারে?
আমি- যে ব্যপারেই বলিনা কেন।
বাবা- আশ্চর্য জানলেতো বলবো।
আমি- তুমি জানো সব জানো।
বাবা- ঠিক আছে বল, জানলে উত্তর দিবো।
আমি- মা আমাকে আমার কত বছর বয়সে রেখে চলে গেছে।
বাবা- এসব প্রশ্ন কেন ?
আমি- বাবা কথা বাড়িও না আমি যা বলছি সঠিক উত্তর দাও।
বাবা- তোর যখন ২ বছর বয়স তখন।
আমি- কেন তোমার মত এমন একজন ভাল মানুষকে মা ছেড়ে চলে গেল ?
বাবা- সে অনেক কথা তুই শুনে কি করবি।
আমি- বাবা বলো, আজ সব শুনবো, সে জন্যই তোমাকে আজ এই পার্কে নিয়ে এসেছি। আজ মা দিবস, ভীষণ মনে পড়ছে মাকে।
বাবা- ঠিক আছে শোন। তোর মা যখন ইংলিশ অনার্সে পড়ে তখন মোবাইলে আমার সাথে তার পরিচয় হয়। ধিরে ধিরে ভাললাগা ভালবাসা। ভালবাসার টানে বাড়ির সবাইকে রাজি করিয়ে আমরা দু জন দু জনকে বিয়ে করি। বিয়ের এক বছর পর তোর মার অনার্স কম্পিøট হয়। আমাদের সংসার খুব সুখের, আমাদের বিয়ের তিন বছর পর তুই জন্ম নিস। আমার ব্যবসার ইনকাম একটু কম তাই সংসার একটু টান টান ছিল, তাই তোর দাদা তোর মাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। তারপর থেকে আমাদের সংসার আরো সুখে ভরপুর হয়ে গেলো। তোর মায়ের মতো ভাল মানুষ আমি কম দেখেছি। সারাদিন চাকরি করে এসে বাড়ির সকল কাজ করে আমি নিষেধ করা সত্তেও। বলতে বলতে বাবা থেমে গেলেন। মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছেন।
আমি- বাবা বলো তারপর কি হলো?
বাবা- হঠাৎ একদিন দেখি তোর মা বাড়িতে ফিরে নি। চারিদিক খোঁজ খবর নিয়ে কোন হদিস মিলল না। হঠাৎ গভীর রাতে ফোন আসে তোর দাদার মোবাইলে। ওপাস থেকে কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তোর দাদার হাত থেকে মোবাইলটা পরে যায়, বুক চেপে ধরে মাটিতে লুটে পরে। সেই রাতেই তোর দাদাকে হাড়াই।
আমি- দাদাকে ওপাস থেকে কি বলেছিল ?
বাবা- তোর মা সেই স্কুলের এক শিক্ষককে বিয়ে করে চলে যায়। তারপর আর কখনো দেখা হয় নি তার সাথে। আমি- আমাকে রেখে যেতে তার কষ্ট হলো না !
বাবা- কষ্ট হলেতো আর তোকে ছেড়ে যেতে পারতো না তাই না ?
কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এমন মহিলাদের মা হওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই। হে খোদা তোমার নিকট আমার বিশেষ আবেদন এই সমস্ত মহিলাদের গর্ভে সন্তান দিওনা। যারা মায়ে মর্যাদা রাখতে পারবে তাদেরকেই তুমি মা হবার আশা পূরণ করে দিও।
রচনাঃ এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
কোন মন্তব্য নেই